Saturday, April 25, 2020

ফ্ল্যাশ ফিকশন : জাতিস্মর




একদিন হঠাৎ আমার স্মৃতি ফিরে আসতে শুরু করলো।
আবিষ্কার করলাম, কয়েকশ বছরের পুরনো স্মৃতি স্পষ্ট মনে করতে পারছি আমি। এমনকি বিপ্লবের আগের স্মৃতিও।
দেড়শ বছর আগে, দ্বিতীয় বিপ্লব সফল হওয়ার পর মহামতী বিপ্লবীরা সেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন। বাধ্যতামূলক অপারেশনের মাধ্যমে সবার এ পর্যন্ত সকল স্মৃতি মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত । উদ্দেশ্য - সব বঞ্চনা, শোষণ আর শ্রেনীবিভেদের স্মৃতি, প্রভুদের স্মৃতি যেন ভুলে যায় সবাই। যেন সকলে নতুন এক স্মৃতিকুঠুরি নিয়ে জীবন শুরু করতে পারে এই বিপ্লবপরবর্তী নয়া-পৃথিবীতে।
আমার স্মৃতিস্মরণের খবর ছড়িয়ে পড়লো খুব দ্রুত। প্রথমে পাড়ার লোকজন, এরপর শহরের বাসিন্দারা ছুটে এলো আগ্রহভরে। এরপর এলো বিভিন্ন হলো-পোর্টালের সাংবাদিকরা। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলাম আমি, কিছুদিনের ভেতর ডাক পড়লো বিভিন্ন টকশো আর রিয়েলিটি শোতে।
সেই থেকে আমি গল্প বলে বেড়াই, প্রদেশ থেকে প্রদেশে। কাড়াকাড়ি করে টিকেট কিনে হলভর্তি শ্রোতারা অপেক্ষা করে আমার জন্যে। তাদের আমি গল্প শোনাই, অনেক আগের অন্য এক পৃথিবীর গল্প। প্রভুদের গল্প। নিশ্চিহ্ন হওয়া অদ্ভুত দুপেয়ে প্রাণিদের গল্প, যারা পৃথিবী-অন্তঃরীক্ষ সবটা জয় করতে চাইতো।
স্মৃতি নিংড়ে সব গল্প উগড়ে দেই শ্রোতাদের কাছে। তারা সকলে মুগ্ধ হয়ে শোনে, নিগূঢ় মনযোগে।
ভুল বললাম অবশ্য, সকলে মুগ্ধ হয়না। শ্রোতাদের অনেকে আবার খুব পুরনো মডেলের, তাদের প্রসেসরের মুগ্ধ হওয়ার ক্ষমতা নেই।

০২.০৪.২০২০

 ১৩০ শব্দের এই ছোটগল্পটা লিখেছিলাম ফেসবুকে রিয়াদ ভাইয়ের #গালগল্প চ্যালেঞ্জে। নিয়ম ছিলো ১০০ শব্দের মধ্যে একটা ফ্ল্যাশ ফিকশন লিখে ফেলতে হবে। আমার কিছু শব্দ বেশি হয়েছে। চ্যালেঞ্জটা চমৎকার, ভাবছি আরও কয়েকটা এরকম লিখে ফেলবো। 

প্রথম ব্লগ : করোনাকালীন ফ্রাস্ট্রেশান, অ্যাচিভমেন্ট এবং পড়াশোনা


ব্লগে লেখালেখি শুরু হলো।
নিজের জীবনযাপন, চিন্তাভাবনা সাধারণত খোলাখুলি বা বিস্তরভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয় না। খেয়াল করে দেখলাম যা ভাবি, যা পড়ি, যা দেখি, শিখি বা করি; সেসব নিয়ে ভাবনাগুলার প্রোগ্রেশনের কোনো  রেকর্ড নাই। তাই অনেকটা নিজের জন্যই ব্লগ খোলা, অনিয়মিত ভাবে নিজের জীবনের, কাজের বা ভাবনার আপডেট দেওয়ার জন্য একটা জায়গা। দেখা যাক কদ্দিন উৎসাহ থাকে এই ব্লগ নিয়ে, আর কদ্দিন ধরে আপডেট দেই।


হিসাব করে দেখলে আজকে আমার ঘরবন্দি জীবনের ৩৯তম দিন। শুরুর দিকে পর্বতসমান উৎসাহ ছিলো, সারাবছর একশোটা কাজ aka প্রজেক্ট aka খ্যাপ ঘাড়ে নিয়ে হিমশিম খেয়ে কোনমতে দিন কাটাই আর চোখের সামনে যাকে তাকে দেখেই ‘ভাই কী যে প্যারায় আছি আর বইলেন না’ বলে নিজের দুঃখগাঁথা শোনাই। সারাক্ষণ মনেহয় ইশ্‌ এই কাজটাই লাস্ট, ‘আর কোনো কাজ নিবোনা। এরপর খালি নিজের প্রজেক্ট ( অ্যানিমেশন শেখা, নিজের কমিক্স, নিজের ব্লগ, ইন্সটাগ্রামে মাহাকাব্য খোলা ইত্যাদি ইত্যাদি আকাশকুসুম স্বপ্ন) আর সেলফ ইমপ্রুভমেন্ট।’ কিন্তু সিসিফাসের পাথরের চাঁই ঠেলে বারবার পর্বতে ওঠানোর মতো প্রত্যেকবারই কোন না কোন কারণে আরেকটা কাজে জড়িয়ে যাই, নিজের জন্য সময় করা হয় না।

তো কোয়ারান্টাইনে ঢুকে শুরুতেই তিনটা প্রজেক্টের অফার ফিরিয়ে দিয়ে নিজেকে পিঠ চাপড়ে বাহবা দিয়ে একদম কোমর বেঁধে নিজের স্কিল ইমপ্রুভমেন্টে নামলাম। হিউম্যান অ্যানাটমি আর ভ্যালু পেইন্টিং শেখার জন্য স্টাডি করা শুরু করলাম, সাথে বহুদিন বাদে নিজের কমিক সিরিজ মাহাকাব্যের জন্য কমিক আঁকা শুরু হলো। আর পাশাপাশি নেটফ্লিক্সে জমে থাকা সিরিজের বিঞ্জ ওয়াচিং আর বাসায় To Read তালিকার উঁচু বইয়ের স্তুপ থেকে একটা একটা করে বই নামিয়ে পড়াও চললো।
ভ্যালু পেইন্টিং ক্যারিক্যাচার : প্রথম শিকার
দুঁদে ক্যারিক্যাচারিস্ট বন্ধু আকিব


দ্বিতীয় শিকার: La Casa de Papel
সিরিজের প্রফেসর। সিরিজের
পুরোটাই এই গৃহবন্দী অবস্থায়
 বিঞ্জ ওয়াচ করা। 
কিছুদিন বাদে মনে হলো এবার নিজের কমিক্সের স্ক্রিপ্টটা ফাইনাল করা শুরু করি। এরপর ভাবলাম, তার আগে আরও কিছু ফিকশন লিখে লেখালেখিটা ঝালাই করে নেই। এবার শুরু হলো ফিকশন রাইটিং। নান রকম গল্প ভাবি, এক জনরার গল্প ভাবতে ভাবতে অন্য জনরায় গিয়ে ঠেকে। নিজের অজান্তেই এক সাইফাই গল্প ভাবতে ভাবতে লেখা শুরু করে দেখি যে গল্পের বিষয় পুরোটাই সাইবারপাংক এরিনা বটফাইটিং এ গিয়ে ঠেকেছে। সেটা নিয়েই কেটে গেল সপ্তাহখানেক। আর কোয়ারান্টাইনের শুরুতেই স্লিপ সাইকেল দুম করে উলটে গেছিলো। সেই নতুন সাইকেলটাও পাকাপোক্ত হয়ে গেল এর মধ্যে।

ফটোশপে কিছু পেইন্টারলি রাফ ব্রাশ নিয়ে ঘাটাঘাটি। 

ততদিনে সবাই মোটামুটি সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলেছে করোনাকে, দেশ লকডাউনে চলে যাচ্ছে। অনেকগুলা প্রিমিয়াম লার্নিং সাইট তাদের সাবস্ক্রিপশন ফ্রি করে দিলো। Society of Visual Storytelling এর ওয়েবসাইট svslearn এর উপর লোভ ছিলো অনেকদিন। সেখানে দূর্দান্ত সব আঁকিয়ের নিজস্ব অনলাইন কোর্স করা যায়, মাসিক ফি ২৫ ডলার। ওরা একমাসের ফি ফ্রি করে দেওয়ায় জেইক পার্কারের ‘রোবটস অ্যান্ড মেকানিকাল ড্রয়িং’ ( বলাই বাহুল্য, রোবট ফাইটিং নিয়ে গল্প ঝোঁক থেকেই, ডাবল দা ট্রাবল!) কোর্সটা করা শুরু করলাম। ওইদিকে Scribd.com নিজেদের এক মাসের সাবস্ক্রিপশন ফ্রি করে দিলো, সেখানে রাজ্যের সব অডিওবুক শোনা যায় খুব আরাম করে। আঁকতে আঁকতে অডিওবুক শোনাও চললো রাতভর।

বেশ কয়েকদিন লেখালেখি আর এই দূর্দান্ত কোর্সের অনেকগুলা ক্লাস করতে করতে আবিষ্কার করলাম যে ছোটগল্প ভেবেছিলাম হাজারখানেক শব্দে শেষ করবো, তিন হাজার শব্দ পেরিয়ে গেলেও গল্প মাত্র অর্ধেকে। সেই অর্ধেক গল্প নানান জনকে আগ্রহভরে পড়তে দেই, রিঅ্যাকশন দেখি।

ইতিমধ্যে ১৫/২০ দিনের মতো কেটে গেছে, টের পাচ্ছি যে যেই পর্বতপোম উৎসাহ নিয়ে সবকিছু উদ্ধার করে ফেলার টার্গেট নিয়ে সবকিছু শুরু করেছিলাম, ধীরে ধীরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি। একসময় দেখি আর লিখতে ভাল্লাগছেনা, গল্পটা একঘেয়ে লাগছে, এমনকি আঁকতেও ইচ্ছা করছেনা। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করলাম, কোন লাভ নেই। মাউস হুইল দিয়ে মাইলের পর মাইল ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করে আর ‘ধুরো কিচ্ছু করা হচ্ছেনা কেন?’ ভেবে ভেবেই সব সময় কেটে যাচ্ছে। এই সমস্যা কিছুদিন পর ফ্রাস্ট্রেশনে পরিণত হলো, সব সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দিলাম। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করলাম, দেখলাম স্কেচবুক বা গ্রাফিক প্যাড কোনোটাতেই আঁকতে বসার দুই মিনিট পর একদম ভালো লাগছেনা, আঁকা হচ্ছেনা, লিখতে বসলে একি লাইন বারবার ব্যাকস্পেস দিয়ে কাটতে কাটতে হাত ব্যথা হয়ে যাচ্ছে, আরও বেশি হতাশায় ডুবে যাচ্ছি। ঘরবন্দি থাকাটা যে এভাবে মানসিক ভাবে চেপে ধরবে, আগে বুঝতে পারিনাই। এভাবে আমার লেখালেখি, আঁকা, নিজের কমিকস, নিজের ব্লগ, ইন্সটাগ্রামে মাহাকাব্য খোলাসহ যাবতীয় সকল বড় বড় প্ল্যান থেমে গেল। তখন একটা ভয় ঢুকলো মনে, ‘ আমি জানি এতো বড় ফ্রি টাইম আমি আর কখনো পাবো না, তাও আমি সময়টা শুধু নষ্ট করে যাচ্ছি।’ এই কথার ভয়। এটা বেশ কিছুদিন ভোগালো।

এতো হতাশার ভেতরও কিছু ভালো দিক আছে, সিলভার লাইনিং যাকে বলে, সেগুলা বলি।

ঠিক করলাম যে চাপ কম নেই, ক্রিয়েটিভিটিতে জোরাজুরি করে লাভ হবেনা। তবে তাই বলে সময়টা অন্য ভাবে কাজে লাগানো শুরু করলাম, নিজে কিছু না করতে পারলেও গাছের ফল চেখে দেখতে তো দোষ নেই। ওই যে কোয়ারান্টাইনের শুরু থেকে নিয়মিত বই পড়ার কথা বলেছিলাম, খেয়াল করলাম যে এতদিনে একটু একটু করে অনেকগুলা বই পড়া হয়ে গেছে। তো সেটাই কন্টিনিউ করলাম, দিনে বই পড়ি বাকি রাতে সিনেমা/সিরিজ দেখি, আর বাকিটা সময় ঘুমাই। ওপার বাংলার অনেকগুলা রিসেন্ট সিনেমা এতোদিন দেখবো দেখবো করেও দেখা হয়নাই, Hoichoi এর একটা অ্যাকাউন্ট খুলে সেগুলাও একটা একটা করে দেখে ফেললাম। আর SVS এর ফ্রি মান্থ এর সময়ও ফুরিয়ে আসছিলো, তাই কোর্সগুলাও শেষ করে ফেললাম। কোর্সের নোট নিতে নিতে স্কেচবুক পরিণত হলো প্রায় নোটবুকে।

টেবিলে একে একে জড়ো
হওয়া বইয়ের একাংশ।
জেক পার্কারের রোবট ড্রয়িং এর কোর্সটা করার পর আরও কয়েকটা কোর্স করেছি, যার মধ্যে Lee White এর Visual Storytelling Techniques কোর্সটা নিঃসন্দেহে দারুণ। এটা আঁকাআঁকি শেখার কোর্স না, বরং একটা আঁকা দিয়ে গল্প বলার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন প্যাসাডেনার আর্টসেন্টার থেকে পড়ে আসা এই ইলাস্ট্রেটর। মূলত চিলড্রেন বুক আঁকার পেছনের থট প্রসেসকে আরও লেভেল আপ করতে চাইলে বেস্ট অপশন।


যাইহোক, সিনেমা দেখা, বই পড়া, কোর্স করা চললো। করোনার আগে এতোকাল হয়তো মাসে সর্বোচ্চ তিনটা বই পড়া হতো, গত এক মাসে সেটা হয়েছে মোট ষোলটা। নট ব্যাড! এর মধ্যে তন্ময় ভাই একবার ফোন করে রিমাইন্ডার দিলেন আসন্ন ফাইট এগেইন্সট করোনা কার্টুন কন্টেস্টের জন্য কার্টুন দিতে। সেজন্যে প্রথমে ম্যাসেঞ্জারে ব্যাক করলাম, এরপর দুদিন আগে ফেসবুকে। কম্পিটিশনের ডেডলাইন ছিলো ২৩ তারিখ, তার আগের এক রাতে চারটা করোনা বিষয়ক কার্টুন করে জমা দিলাম। বহুদিন বাদে একটানা এঁকে গেছি, একটার পর একটা আইডিয়া আর নিজের ইচ্ছামতো একেকটা এক্সিকিউশান, মনে হচ্ছিলো আরও একদিন সময় পেলে আরও পাঁচটা এঁকে ফেলতাম। যাইহোক, সেই কার্টুন নিয়ে আলাদা পোস্টে বলবো।

ব্লগ আপাতত শেষ, এই বন্ধে যা যা পড়লাম তার একটা লিস্ট তুলে দেই। অনেকগুলার রিভিউ-ই গুডরিডসে লিখেছি। তাও দুই এক লাইনে কিছু যোগ করতে ইচ্ছা হলে সেগুলাও যোগ করে দিলাম।

১. ধনুর্ধর - সিদ্দিক আহমেদ

হিস্টোরিকাল ফিকশন জনরার বই, আড়াই হাজার বছর আগের পাঞ্চাল আর কুশলের যুদ্ধ নিয়ে। খুবই ইফোর্ট দিয়ে লেখা, গল্পের পলিটিকাল প্যাচ, একশন, রাজরাজরাদের গেইম অব থ্রোন্সের কথা মনে করিয়ে দেয়। গল্পের মধ্যে জর্জ মার্টিনের লেখারও একটা সুর আছে। ছোটখাট ইস্যু আছে, এন্ডিং নিয়েও অনেক কিছু বলা যায়। কিন্তু সব মিলিয়ে খুবই আলাদা একটা বই। শুধু থ্রিলার পড়ুয়াদের গন্ডির বাইরেও এই বইয়ের মর্যাদা হওয়া দরকার। আরও জানতে চাইলে গুডরিডসে আমার বিস্তারিত রিভিউ এখানে

২. Habibi - Craig Thompson

প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার একটা মহাকাব্যিক গ্রাফিক নভেল। শুধু কালিতে আঁকা, পুরো বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন ডিজিটালের কাজ নাই, এমনকি টেক্সট গুলাও হাতে লেখা। অসাধারণ ডিটেইলিং, বিব্লিকাল স্টোরিটেলিং, রেলিজিওনের গল্পগুলার এক্সপ্লোরেশন এতো দারুণ। বইটা শেষ করার পর মাথা ফাঁকা হয়ে ছিলো।
গুডরিডসে আমার আবেগপ্রবণ রিভিউ পড়তে পারেন এখানে

ঢাউস সাইজের গ্রাফিক নভেল হাবিবি।
দেখলেই ভক্তি ভক্তি লাগে।
কালি তুলি দিয়ে আঁকা নিখুঁত ডিজাইন আর দূর্দান্ত ড্রয়িং


৩. Smoke And Mirrors - Neil Gaiman


প্রিয় লেখকের প্রথম গল্পসমগ্র। অনেক আলাদা, অনেক এক্সপেরিমেন্টাল, অনেক গল্পই কবিতা হয়ে গেছে, কিছু হয়েছে মঞ্চ নাটক। কিন্তু সবগুলার মধ্যেই গাইম্যানের সেই অদ্ভুত শিরশিরে জাদুর ছোঁয়া আছে। সবার হয়তো ভালো লাগবেনা, গাইম্যানের পাঁড় ভক্তদের জন্য রেকমেন্ডেড।

৪. Ocean at the End of the Lane - Neil Gaiman
বহুদিন ধরে পড়ার জন্য রেখে দেওয়া। এটা পড়িনাই, Scribd থেকে অডিওবুক শুনেছি কাজ করতে করতে। বইটা পড়তে খুবই আপন লেগেছে, খুবই খুবই পার্সোনাল একটা বই যেন, অথচ এইটা ফ্যান্টাসি বই!

৫. সদত হসন মন্টো রচনা সংগ্রহ - রবিশংকর পাল

ওপার বাংলার বই, আমার পড়া মান্টোর তৃতীয় গল্পসমগ্র। বইয়ের বিশেষত্ব হলো বিখ্যাত গল্পগুলো বাদে তার অন্যান্য লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যাওয়া গল্পগুলো প্রাধান্য পেয়েছে। সাথে মান্টোর নিজের লেখা কিছু প্রবন্ধ, একটা চিঠি আর একটা নাটকও আছে। অনুবাদগুলো ঝরঝরে। সবমিলিয়ে বইটা ভীষণ পছন্দ হলো, পয়সা উসুল।

৬. স্বাধীনতা যুদ্ধে অচেনা লালবাজার - সুপ্রতিম সরকার

ট্রু ক্রাইম নিয়ে কোলকাতার লালবাজার পুলিশ হেটকোয়ার্টার্সের বিভিন্ন কেস ফাইল নিয়ে লেখা বইয়ের সিরিজ লালবাজার। তবে এই বইটা আলাদা, লালবাজার ও তার আশেপাশে ঘটে যাওয়া স্বদেশি আন্দোলনের অনেকগুলো অপারেশন তুলে ধরা হয়েছে। লেখকের লেখার হাত বরাবরের মতই প্রশংসনীয়।

৭. অবয়ব - তানজীম রহমান

বর্তমানের থ্রিলার/ ফ্যান্টাসি/ হরর লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে আলাদা লেখকের বই, অনেক আগ্রহভরে কেনা। হরর জনরার বই, পড়ে বোঝা যায় উনি ডেলিবারেটলি এক্সপেরিমেন্টালভাবেই বইটা লিখেছেন। তবে আমার সবমিলিয়ে আমার জন্য তেমন জমেনাই বইটা।

৮. দ্য স্ট্রেঞ্জার - আলবেয়ার কামু

পড়ার সময় একটা ঘোরের ভেতর ছিলাম। মনে ধরেছে। বাকি বইগুলা পড়ে ফেলতে হবে।

৯. Punk Rock Jesus - Sean Murphy

আইজনার অ্যাওয়ার্ড জয়ী আর্টিস্ট শন মার্ফির নিজের লেখা নিজের আঁকা কমিক্স। দূর্দান্ত আঁকা, আর গল্পের প্লটও খুব চমৎকার। বিশাল মাল্টিবিলিওনিয়ার কোম্পানি জিসাস ক্রাইস্টের ডিএনএ থেকে তার ক্লোন করলো, আর তার জীবন/ বেড়ে উঠার উপর ২৪ ঘন্টা লাইভ রিয়েলিটি শো করা শুরু করলো। খুবই ইন্ট্রিগিং প্লটলাইন। আমার বড়সড় রিভিউটা পড়তে চাইলে পড়তে পারেন এখানে

শন মার্ফির ঝকঝকে আঁকা। বর্তমানে
ডিসির সবচেয়ে প্রিয় আর্টিস্ট আমার।
punk rock jesus hq - Pesquisa Google | Arte punk, Arte de cómics ...
বিব্লিকাল! 

১০. আমেরিকা! আমেরিকা!! - আহসান হাবীব

বস আহসান হাবীবের অ্যামেরিকা ভ্রমণের বই, বসের চিরাচরিত হিউমারভরা ফুরফুরে লেখা, একদম পার্ফেক্ট লাইটরিড। বইভর্তি ছবি, সবগুলা লেখাই আগে ফেসবুকে পড়া থাকলেও আবার পড়তে তাই ভালোই লাগলো। যখন ফ্রাস্ট্রেশনে পড়ে প্যারা খাচ্ছিলাম, তখনকার জন্য একদম যুৎসই দাওয়াই।

১১. Fortunately The Milk - Neil Gaiman

এটাও অডিওবুক হিসেবে শোনা। ভীষণ মজার একটা বাচ্চাদের বই, পড়ে মনে হইলো এরকম ছোটদের গল্প না লিখতে পারলে লেখার দরকার নাই। আরেক প্রিয় আঁকিয়ে Scottie Young এর আঁকাও দারুণ।


১২. Stories of Your Life and Others - Ted Chiang

এই বইমেলায় বের হওয়া অনুবাদটা পড়েছি। লেখক একদমই প্রথাবিরোধী সাই ফাই লেখক, তার গল্পের পেছনের বিজ্ঞানের ভাবনা আর গল্পের এক্সিকিউশান দুইটাই খুবই আলাদা। কিছু গল্প ভালো লেগেছে, কিছু গল্প লাগে নাই।

১৩. How to Talk To Girls at Parties - Neil Gaiman ( Artists - Fabio Moon and Gabriel Ba)

গাইম্যানের খুবই খুবই অড একটা ছোটগল্পের কমিক ভার্সন। এঁকেছে বারজিলিয়ান মানিকজোড় ফেবিও মুন আর গ্যাব্রিয়েল বা যমজ ভাতৃদ্বয়। ওয়াটারকালারের এউ স্টাইলটা এই গল্পের মুডের সাথে তো মানিয়ে যাবে ভাবতেই পারিনাই, শেষের দিকের জলরং এর কাজগুলা একেবারে খাসা। গুডরিডসের আমার একটা ছোটখাট রিভিউ আছে এখানে

HOW TO TALK TO GIRLS AT PARTIES
লেখা-আঁকার চমৎকার জুটি। 
১৪. Snow, Glass, Apples - Neil Gaiman ( Artist - Colleen Doran )

স্মোক অ্যান্ড মিরর্স বইয়ের সর্বশেষ এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্পের কমিক ভার্সন। পুরো বইটাই কমিকের জন্য খুবই আন ইউজুয়াল স্টাইলে আঁকা, পরে ঘেটে দেখলাম দেড়শো বছর পুরনো এক মাস্টার আর্টিস্টস Henry Clarke এর গথিক ইলাস্ট্রেশনস থেকে ইন্সপায়ার্ড স্টাইল। তবে কালারিং খুবই দুর্বল ।
বইয়ের কভার 

হেনরি ক্লার্কের ক্লাসিক গথিক আর্টওয়ার্ক,
 এডগার এলান পোর গল্পের জন্য

১৫. অন্ধ জাদুকর - শরিফুল হাসান

ইন্টারেস্টিং প্লট, ফ্যান্টাসি। ট্রিলোজির প্রথম বই। মোটামুটি এক্সিকিউশন, অনেক বেশি কিছুই সিক্যুয়েলের জন্য রেখে দেওয়া। স্বকীয় বই হিসেবে এলিমেন্ট আরও বেশি থাকলে ভাল্লাগতো।

১৬. গল্পসমগ্র - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

এটা শেষ হয়নাই, ইচ্ছে করেই জমিয়ে জমিয়ে পড়ছি। একেকটা গল্প পড়ি আর মুগ্ধতায় হাহাকার করে উঠি।

আপাতত এই। আমি একবারে ৫/৬টা বই একসাথে পাশাপাশি পড়ি, এখনও সেভাবেই পড়া হচ্ছে। দেখা যাক কোনটা আগে শেষ হয়।