গতমাসে (এপ্রিলে) নিজের কাজ/লকডাউন/ঘরবন্দিত্ব এসবের ফ্রাস্ট্রেশনে সব সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে বসে আছি, ছবি আঁকায় একদম মন বসছে না তাই রাতদিন বইপড়া আর সিনেমা দেখা চলছে। অমন সময় একদিন তন্ময় ভাইয়ের ফোন, জানালো যে ফাইট এগেইন্সট করোনা কার্টুন কম্পিটিশনের টাইম বেড়েছে, আমি যেন মনে করি সাবমিশন দেই।
মনে পড়লো, ফেসবুক ডিঅ্যাক্টিভেট করার আগেই খবরটা দেখছিলাম,
কার্টুন পিপল করোনার সাবধানতা বিষয়ক একটা কার্টুন কম্পিটিশন আয়োজন করবে, মূল উদ্দেশ্য সিলেক্টেড সব কার্টুন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া, কপিরাইট ছাড়াই ফ্রি ইউজ/ ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য।
যাইহোক, তন্ময় ভাই জানালেন আরও নতুন একটা খবর আছে। Access to Information, মানে a2i এই কন্টেস্টের প্রাইজ মানি দিচ্ছে মোট এক লাখ টাকা, ফার্স্ট প্রাইজ ৫০ হাজার, সেকেন্ড আর থার্ড যথাক্রমে ৩০ আর ২০ হাজার টাকা।
 |
Add caption |
নতুন ডেডলাইন সম্ভবত ২৩ তারিখ ছিলো, আমি ২১ তারিখ রাতে ফেসবুক ওপেন করলাম। প্রতিযোগীতার মূল থিমে দেওয়া আছে WHO থেকে অনুমোদিত করোনা সম্পর্কে সচেতনতার বিষয়গুলা। মাথায় মধ্যম মানের দুই একটা আবছা আইডিয়া ঘুরঘুর করছিলো, ভাবলাম আঁকা শুরু করি, কিন্তু সেই রাতে ডেল টোরোর একটা সিনেমা দেখতে গিয়ে আর আঁকা হলোনা, ঠিক করলাম পরদিন শেষ সময়েই আঁকবো। পরদিনও ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে বিকেল ( করোনার কারণে ৩৬০ ডিগ্রি উলটো স্লিপ সাইকেলের কারণে)। আঁকতে বসতে গিয়ে মোটামুটি সন্ধ্যা হয়ে গেল, আজকে রাতের মধ্যেই যা আঁকার এঁকে জমা দিয়ে দিতে হবে।
 |
প্রথমটা। কবি সুকান্তর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। |
প্রথম কার্টুনটা কিছুটা ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং স্টাইলে আঁকলাম। চাঁদ আর করোনা নিয়ে কার্টুনটা ওইরকমই একটা অ্যাপ্রোচ ডিমান্ড করছিলো। তবে এই কার্টুনটা ঠিক প্রতিযোগীতার নিয়ম মেনে আঁকা হয়নাই, সচেতনতা বা করোনা প্রতিরোধের ব্যাপারটা ছিলোনা। সেটা জেনেশুনেই এইটা আঁকা, ভিজ্যুয়ালটা বেশ পছন্দ হয়ে গেছিল বলে।
প্রথমটার মোটামুটি মিডিওকার একটা আইডিয়া নিয়েই আঁকা, খুব আহামরি কোনো আইডিয়া পাচ্ছিলাম না বলে। দেখা গেল একটা আঁকতে গিয়েই দেখি আরও অনেকগুলা আইডিয়া আসছে, তারপর আরেকটা আঁকতে গিয়ে আরও অনেকগুলা। দেখা গেল ভোর পর্যন্ত চারটা কার্টুন এঁকে ফেলেছি এক বসায়।
তবে আইডিয়ার পাশাপাশি এইবার যেটা করেছি, নিজের কার্টুন স্টাইলটাকে চেঞ্জ করেছি। ওল্ড মাস্টার কার্টুনিস্ট সার্জিও অ্যারাগোনেসের বিখ্যাত কমিক সিরিজ GROO পড়ছিলাম। বারবার মুগ্ধ হয়েছে তার আঁকার ফ্লুয়েন্সিতে, আর মজাটায়। আমাদের মতো সবকিছু একদম ঝাঁ চকচকে ক্লিন আর সব ফর্ম-অ্যানাটমি মেনে আঁকা আড়ষ্ট কার্টুন না, বরং হালকা মেজাজে আঁকা দারুণ স্টাইলিস্টিক একটা অ্যাপ্রোচ, প্রচুর কুইক লাইনস । পুরনো দিনের ম্যাড ম্যাগাজিনের কার্টুন বা নিউজপেপার বক্স কার্টুনগুলা যেরকম আঁকা হতো, সেরকম। তাই ওই ফ্লুয়েন্সিটাও ধরার চেষ্টা করেছি এবার কার্টুন স্টাইলে, এবং সেটা খুবই এনজয় করেছি। বহুদিন পর আঁকতে বসে এক রাতে চারটা কাজ নামিয়ে ফেলতে এতো ভাল্লাগবে আগে বুঝিনাই।
 |
প্যারানয়া নিয়ে একটা আইডিয়া ছিলো। |
 |
এইটা পার্সোনাল ফেভারিট। এঁকে খুব মজা পেয়েছি। |
 |
সবার শেষে আঁকা। আনন্দ নিয়ে কালার করেছি। |
যাইহোক, এতোকথার পর মূল কথা বলা যাক। ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে। রেডিও ঢোলের একটা লাইভ শো তে উইনার রিভিল করার কথা। তন্ময় ভাই আরজে কায়সার ভাইয়ের সাথে টপ ৩০ কার্টুন নিয়ে আলোচনাক করছেন, আমরা সবাই মোটামুটি অধৈর্য্য হয়ে শুনছি। এরপর হঠাৎ ‘কী হইতে কী জানি হইয়া গেল’ দেখা যে আমার একটা কার্টুনের পাশে ( যেটা সবার শেষে এঁকেছিলাম) ফার্স্ট প্রাইজ ট্যাগটা ঝুলছে।
সেকেন্ড আমাদের রাকিব রাজ্জাক, আর থার্ড হয়েছেন সৈয়দ ফিদা হোসেন ভাই ( চারুকলার বেশ সিনিয়র বড় ভাই, উনার পেইন্টিং দেখে বারবার দেখে মুগ্ধ হই, ট্রেডিশনাল/ডিজিটাল দুই-ই।)
 |
মরা বক |
তো প্রথম যে হয়ে যাবো এটা একদমই এক্সপেক্ট করিনাই। টপ ফিফটি কার্টুন নিয়ে কম্পিটিশনের জুরি প্যানেল
লাইভ ডিসকাশন করেছিলেন, সেখানে জুরি ছিলেন বস আহসান হাবীব, ছড়াকার অনিক খান হলিউড সিনেমারভিএফেক্স ওয়াহিদ ইবনে রেজা। লাইভে আমার কার্টুনগুলা নিয়ে বস, অনিক ভাই আর বাপ্পী ভাইয়ের ভূয়সী প্রশংসা শুনে রীতিমতো লজ্জা পেয়ে গেছিলাম, স্পেশালি বসের মুখে শুনে।
যাইহোক, কম্পিটিশনে কার্টুন জমা পড়েছিলো ৭০০+, সেখান থেকে সেরা দেড়শো অনলাইনে এক্সিবিট করা হয়েছে। বেশ অনেক কার্টুনিস্টের অসাধারণ সব আইডিয়ার কার্টুন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সবচেয়ে প্রিয় কার্টুন গুলা হলো ঐশিক জাওয়াদ, রেহনূমা প্রসূন, রাকিব আরকে, হাসিব কামাল এর।
অনেক মানুষ কংগ্রাচুলেট করেছে, আমি একদম ক্যাবলা হাসি দিয়ে জ্বি জ্বি করে গেছি, মনে মনে মরা বক হাতে ভুয়ো ফকির হয়ে ঝড়ের কাছে ধন্যবাদ দিয়েছি।